আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা সত্ত্বেও মাধ্যমিক স্কুলে করা কমিটি বাতিল করছে না ছাত্রলীগ। তবে নতুন করে কোনো কমিটি না করার সিদ্ধান্ত্ম নিয়েছে ছাত্র সংগঠনটি।
গত ২১ নভেম্বর মাধ্যমিক স্কুলে কমিটি তৈরি করতে সব সাংগঠনিক ইউনিটকে নির্দেশ দিয়েছিল ছাত্রলীগ। সংগঠনের স্কুলবিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীনকে এটি সমন্বয়ের নির্দেশও দেয়া হয়।
ছাত্রলীগের তথ্য মতে ঢাকার আটটিসহ দেশের ৩০ থেকে ৩৫টি স্কুলে কমিটি করেছে সংগঠনটি। এর আগেও কিছু স্কুলে কমিটি ছিল।
ছাত্রলীগের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের স্কুলপর্যায়ে কোনো কার্যক্রম নেই। তারা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েই কার্যক্রম চালায়।
অল্প কিছু স্কুলে ছাত্রলীগের আগে থেকেই কমিটি থাকলেও কিশোরদের মধ্যে ছাত্রলীগের তেমন কোনো তৎপরতা ছিল না। যদিও সংগঠনটির গঠনতন্ত্রে আগে থেকেই স্কুলবিষয়ক সম্পাদকের পদ ছিল।
কিশোরদের মধ্যে তৎপরতা বাড়াতে ছাত্রলীগ সিদ্ধান্ত্ম নেয়ার পর থেকেই এই উদ্যোগ নিয়ে সমালোচনা শুরম্ন হয়। শিক্ষার্থীরা কৈশোরেই রাজনীতিতে জড়িয়ে গেলে পড়ালেখায় তাদের মনোযোগ থাকবে কি না এ নিয়ে সংশয়ের কথা জানান বিভিন্ন জন। আবার ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সহিংসতার প্রবণতা থাকায়ও এ নিয়ে এক ধরনের ভীতি ছড়িয়েছিল।
আবার স্কুলে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের নয় দিনের মাথায় পিরোজপুরের নাজিরপুরে একটি স্কুলের শিক্ষককে পেটানোর ঘটনায় নাম আসে ওই স্কুল ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগ তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত্মে ওই কমিটি বিলুপ্ত করলেও তখনও ছাত্রলীগের এই উদ্যোগ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়।
ছাত্রলীগ এই সিদ্ধান্ত্ম নেয়ার এক মাস পর গত ২৩ ডিসেম্বর রাজধানীতে ছাত্রলীগের এক আলোচনায় কাদের এই সিদ্ধান্ত্মের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের স্কুল কমিটি ধারণাটি ঠিক না। এই মুহূর্তে একটি সমালোচনা ডেকে আনার দরকার নেই। স্কুল কমিটির উদ্যোগ নেয়ার পর থেকে সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে।’
কাদের আরও বলেন, ‘ছেলেমেয়েদের পিঠের উপর বই-পুস্ত্মকের বোঝা, বাচ্চাগুলোকে দেখলে মনে হয় যেন মরম্নভূমির পথ বেয়ে চলছে। তারপর আবার রাজনীতির আরেক বোঝা। দরকার নেই এসবের।’
তবে কাদেরের আপত্তিতেও স্কুল কমিটি করার সিদ্ধান্ত্ম থেকে পুরোপুরি সরে আসতে চাইছে না ছাত্রলীগ। তবে নতুন করে কোথাও এই কমিটি করা হবে না বলে জানিয়েছেন নেতারা।
ছাত্রলীগ নেতারা জানান, ওবায়দুল কাদের ‘এই মুহূর্তে সমালোচনা টেনে আনার দরকার নেই’ উলেস্নখ করায় ছাত্রলীগ ভেবেছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কথা বলেছেন তিনি। তিনি ভবিষ্যতের জন্য এই ধরনের কমিটি করতে না করেননি। এ কারণেই এই উদ্যোগ থেকে পুরোপুরি পিছিয়ে আসতে চাইছে না ছাত্র সংগঠনটি।
ওবায়দুল কাদের বিরোধিতা করলেও স্কুল কমিটি কেন বাতিল হবে না- জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘তিনি একটি সময়ের প্রেক্ষিতে এই কথা বলেছেন। তিনি তো আমাদের এই উদ্যোগ বাতিল করতে বলেননি।’
কিন্তু ওবায়দুল কাদের তো বলেছেন, স্কুলে ছাত্র সংগঠনের দরকার নেই- এই মন্ত্মব্যে সোহাগ বলেন, ‘আপাতত আমাদের স্কুল কমিটি গঠনের যে প্রক্রিয়া রয়েছে তার কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।’
একই ধরনের কথা বলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এক এম জাকির হোসাইনও। তিনি বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পরামর্শে নতুন কমিটি গঠনের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি। আপাতত আর কোনো স্কুলে এই কমিটি গঠন করা হবে না।’
Leave a Reply